মেহের আলি – আর্য তীর্থ ।।
পাগলটা চিৎকার করছে। শুনতে পাচ্ছ না? তোমরা যেই সোল্লাসে ঘরবন্দি খেলবে বলে মদের দোকানে লাইন দিচ্ছ, তোমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছেঁড়া আলখাল্লা পরে চুল দাড়ির জঙ্গল থেকে হেঁকে উঠছে সে, “সব সছ্ হ্যায়, সব সছ্ হ্যায় তফাৎ যাও, তফাৎ যাও।” কিংফিসার আর বাকার্ডির হিসেবে মগ্ন তোমরা আধা নগ্ন লোকটাকে তবুও দেখতেই পাচ্ছো না? পাগলটা পাঁই পাঁই করে ঘুরছে চারিদিকে। সবজির ঠেলাঠেলি নিলামে হামলে পড়ছে। নমাজের জমায়েতে গিয়ে ঠোক্কর খাচ্ছে। মা কালীর থান এ পাঁচশো লোকের ভোগের পঙক্তিতে হঠাৎ তিড়িংবিড়িং নৃত্য করছে। আর সাথে ওই বিকট চিৎকার, “তফাৎ যাও, তফাৎ যাও। সব সছ্ হ্যায়, সব সছ্ হ্যায়।” বদ্ধ উন্মাদটা এত চেঁচিয়ে যাচ্ছে, যে ফুসফুস দুটো ওর গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। অথচ কোথাও তার আওয়াজ পৌঁছচ্ছে না? কেউ সিটকে সরে যাচ্ছে না একটুও? বরঞ্চ আরও গা ঘেষাঘেষি করে বসছে।
সবাইকে একসাথে কান্না আর কান্না হয়ে গেল নাকি? পাগলটা ঘুমোয় না, খায় না, অন্যকিছু গায় না। শতাব্দী-মলিন পোষাকে জনতার ভিড়ে ঘুরে বেড়ায়। নেতাদের স্তাবক জনতার মাঝে, কোচিং ক্লাসে অবুঝ জয়েন্ট পিপাসু রোবটের মেলায় ” অতো কিছু হবে না” বলে হো হো আড্ডার পাড়ার ক্লাবে ও বিবেকের ভূতের মত ভেসে বেড়ায়। অনেক হত্যা দেখা চোখে, আরো দেখার আতঙ্ক নিয়ে দুই হাতে ও সবাইকে আলাদা করার চেষ্টা করছে গত তিন মাস ধরে। শুনতে পাচ্ছ? “তফাৎ যাও” এই আর্তনাদ কেউ কি শুনতে পাচ্ছ? শুনছে না কেউ মেহের আলী। তুমি খালি চিৎকার করেই যাচ্ছ।
সমাপ্ত।।